ডেস্ক নিউজ
প্রকাশিত: ০২/০৩/২০২৫ ১০:৩৪ এএম

শুধু শহরের অলিগলি নয়, প্রত্যন্ত অঞ্চলেও প্রতিনিয়ত বড় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠছে, যার মধ্যে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের ব্যবসা শনাক্তকরণ নম্বর (বিআইএন) বা ভ্যাট নিবন্ধন নেই। ফলে বিপুল পরিমাণ বিক্রি থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাট আদায় করতে পারে না জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। আবার এনবিআরের ভ্যাট বিভাগের মাঠপর্যায়ে জনবল ও লজিস্টিক সাপোর্ট না থাকায় এসব প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাটের আওতায় আনা যাচ্ছে না। যদিও সীমিত জনবল আর লজিস্টিক সাপোর্ট নিয়ে ভ্যাট কমিশনারেটের কর্মকর্তারা প্রতিষ্ঠানগুলোকে নিবন্ধনের আওতায় আনার চেষ্টা করছে। নিবন্ধনহীন এসব প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে নিবন্ধনের আওতায় আনতে ছয়টি উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর। কর্মকর্তারা বলছেন, আয়কর বিভাগ ৪৬টি সেবা গ্রহণের ক্ষেত্রে রিটার্ন দাখিলের প্রমাণপত্র (পিএসআর) বাধ্যতামূলক করেছে, যার ফলে করযোগ্য ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান এসব সেবা নিতে গিয়ে বাধ্যতামূলকভাবে টিআইএন গ্রহণ ও রিটার্ন দাখিল করছেন। ভ্যাট বিভাগেও একইভাবে ছয়টি সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে বিআইএন বাধ্যতামূলক করার উদ্যোগ নিয়েছে, যার ফলে ভ্যাটযোগ্য প্রতিষ্ঠান ছয়টি সেবা নিতে গেলে নিবন্ধন নেয়া ও ভ্যাট দিতে বাধ্য হবে।

বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) অর্থনৈতিক শুমারির হিসাব অনুযায়ী, দেশে স্থায়ী অর্থনৈতিক ইউনিটের সংখ্যা ৬২ লাখ ৪৪ হাজার ২১৪। এর মধ্যে গ্রামাঞ্চলে রয়েছে ৩৯ লাখ। আর শহরে রয়েছে ২৩ লাখ। আর এনবিআরের হিসাব অনুযায়ী, ভ্যাট নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ৫ লাখ ৬৮ হাজার। অর্থাৎ ছোট-বড় প্রায় ৫৭ লাখ প্রতিষ্ঠান ভ্যাট আওতার বাইরে রয়েছে। এনবিআর সূত্রমতে, শহর থেকে গ্রামÑসব জায়গায় এসব প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধনের আওতায় আসেনি। তবে সব ভ্যাটযোগ্য প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব হচ্ছে না। সব প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসকে ভ্যাট নিবন্ধনের মাস ঘোষণা করেছে এনবিআর। সারাদেশের মাঠপর্যায়ে সব কমিশনারেট একযোগে নিবন্ধনহীন প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনার কাজ করে যাচ্ছে। তবে নিবন্ধনহীন প্রতিষ্ঠান খুঁজে বের করা কষ্টসাধ্য বলে এনবিআরকে জানিয়েছেন মাঠ কর্মকর্তারা। নিবন্ধনহীন প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের আওতায় আনতে কয়েকটি প্রস্তাবনা দিয়েছেন। কমিশনারেট থেকে এনবিআরকে লিখিত প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এছাড়া সম্প্রতি ভ্যাট বিভাগের একটি সভায় বেশ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তারা। এসব প্রস্তাবনা আমলে নিয়ে এনবিআর নিবন্ধন বাড়াতে ছয়টি সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে বিআইএন বা ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করতে যাচ্ছে। সেজন্য মূসক বাস্তবায়ন থেকে মূসক নীতিতে প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে, যাতে তা অনুমোদন করে আদেশ জারি করা হয়, যার মধ্যে একটি হলো ট্রেড লাইসেন্স।

এনবিআর বলছে, একটি ব্যবসায় উদ্যোগ আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু করার প্রথম শর্ত হলো ট্রেড লাইসেন্স নেয়া। শহর থেকে গ্রাম পর্যন্তÑসব জায়গায় ব্যবসা শুরু পর ছোট-বড় ব্যবসায়ীরা ইউনিয়ন, পৌরসভা, সিটি করপোরেশন থেকে ট্রেড লাইসেন্স গ্রহণ করেন। এছাড়া প্রতিবছর সেই ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন করা হয়। নতুন ট্রেড লাইসেন্স নেয়া বা ট্রেড লাইসেন্স নবায়নের সময় বিআইএন বা ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হলে নিবন্ধনহীন সব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনের আওতায় চলে আসবে। নিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান প্রতিমাসে দাখিলপত্র বা ভ্যাট রিটার্ন দিতে বাধ্য হবে। একইসঙ্গে এসব প্রতিষ্ঠান থেকে ভ্যাট আদায় সহজ হবে। ট্রেড লাইসেন্স দেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন রয়েছে কি না বা নিয়মিত রিটার্ন দাখিল করে কি না, তা ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন এনবিআরের ওয়েবসাইট থেকে যাচাই করে নিতে পারবে।

ভ্যাট বিভাগের মাঠপর্যায়ের একাধিক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে জানিয়েছেন, স্থানীয় সরকারের আওতাধীন ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন করে থাকে। তবে এখন পর্যন্ত কী পরিমাণ তার কোনো হিসাব নেই। ব্যাংক হিসাব খোলা, ইউটিলিটি সংযোগ নেয়াসহ বেশ কিছু সেবা নিতে হলে প্রতিষ্ঠানের ট্রেড লাইসেন্স থাকতে হয়। সেক্ষেত্রে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের সময় ভ্যাট নিবন্ধন বা বিআইএন বাধ্যতামূলক করা হলে লাখ লাখ প্রতিষ্ঠান সহজে নিবন্ধনের আওতায় চলে আসবে। বিষয়টি আমলে নিয়ে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়নের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠান ভ্যাট নিবন্ধন গ্রহণ করেছে কি না এবং সর্বশেষ অনলাইনে দাখিলপত্র দাখিলের প্রমাণক প্রাপ্তি সাপেক্ষে ট্রেড লাইসেন্স ইস্যু ও নবায়ন করতে ইউনিয়ন, পৌরসভা ও সিটি করপোরেশন যাচাই করে দেখতে পারবে।

অপরদিকে বাণিজ্যিক বা ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠান চালু করতে হলে ইউটিলিটি সেবা, যেমনÑবিদ্যুৎ, গ্যাস, পানি, ইন্টারনেটসহ বেশ কিছু সেবা নিতে হয়। পৌরসভা, সিটি করপোরেশন, বিদ্যুৎ বিভাগ, ওয়াসা, ইন্টারনেট সংযোগকারী সংস্থা প্রতিষ্ঠানগুলোয় এসব সংযোগ দিয়ে থাকে। সংযোগ সেবা নিতে হলে প্রতিষ্ঠানের বেশ কিছু কাগজপত্র দিতে হয়। এসব সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হচ্ছে। ফলে নিবন্ধনহীন প্রতিষ্ঠানকে এসব নিতে গেলে বাধ্যতামূলকভাবে ভ্যাট নিবন্ধন নিতে হবে। আবার গ্রাম থেকে শহর পর্যন্ত সব জায়গায় ব্যবসায়ীদের সমিতি ও চেম্বার রয়েছে। ব্যবসার ধরন অনুযায়ী ব্যবসায়ীরা সমিতি ও চেম্বারের সদস্য নেন। সদস্যপদ না থাকলে ব্যবসায়ীদের নানান সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এই সদস্যপদ নেয়ার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের মালিককে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন নিতে হবেÑএমন শর্তারোপ করছে এনবিআর। এর ফলে প্রতিষ্ঠানের মালিকরা বাধ্যতামূলকভাবে ভ্যাট নিবন্ধন নেবেন। আবার ছোট-বড় ব্যক্তি মালিকানাধীন বা অংশীদারিত্ব যে কোনো ব্যবসার ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের ব্যাংক হিসাব খুলতে হয়। এই ব্যাংক হিসাব খোলার ক্ষেত্রে ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করছে এনবিআর। ফলে ব্যাংক হিসাব খুলতে গেলেই প্রতিষ্ঠানকে বাধ্যতামূলকভাবে ভ্যাট নিবন্ধন নিতে হবে।

অন্যদিকে দেশে প্রতিনিয়ত মোবাইল ব্যাংকিং জনপ্রিয় হচ্ছে। গত কয়েক বছরে দেশে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা শহর থেকে পর্যন্ত বিস্তৃত লাভ করেছে। মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস (এমএফএস) প্রতিষ্ঠানগুলো এজেন্ট বা ছোট ব্যবসায়ীদের মাধ্যমে এই সেবা দিয়ে যাচ্ছে। এমএফএস প্লাটফর্ম ব্যবহারকারী ব্যবসায়ীদের বাধ্যতামূলকভাবে এমএফএস মার্চেন্ট আকাউন্ট খুলতে হয়। এই মার্চেন্ট অ্যাকাউন্ট খোলার ক্ষেত্রে ওই ব্যবসায়ীর ভ্যাট নিবন্ধন নেয়া বাধ্যতামূলক করতে চায় এনবিআর। ফলে কয়েক লাখ ব্যবসায়ী নিবন্ধনের আওতায় চলে আসবেন। এছাড়া অনেক ছোট ও বড় দোকান বা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের বিপুল পরিমাণ বিক্রি রয়েছে। কিন্তু এসব প্রতিষ্ঠান থেকে সরকারের কোনো ভ্যাট আদায় সম্ভব হয় না। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায়, প্রতিষ্ঠানের মালিক তার নিজস্ব আয়কর রিটার্নে ওই ব্যবসার আয় প্রদর্শন করেন। কিন্তু ওই প্রতিষ্ঠানের ভ্যাট নিবন্ধন নেয়া হয়নি।

সেজন্য ব্যবসা থেকে আয় রয়েছে, এমন আয়করদাতা প্রতিষ্ঠানকে ভ্যাট নিবন্ধন নেয়া বাধ্যতামূলক করা হবে। এ বিষয়ে এনবিআরের এক কর্মকর্তা শেয়ার বিজকে জানিয়েছেন, ভ্যাট নিবন্ধন বাড়াতে শুধু এই ছয়টি নয়, আরও বেশ কয়েকটি খাতে ভ্যাট নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করার চিন্তা করছে এনবিআর। ভ্যাট বিভাগের মাঠ পর্যায়ে জনবল আর লজিস্টিক সমস্যার কারণে অনেক সময় সব প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধনের আওতায় আনা সম্ভব হয় না। যদিও সারাদেশের বহু ভ্যাটযোগ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান এখনো নিবন্ধনের আওতার বাইরে রয়েছে। ছয়টি সেবা নেয়ার ক্ষেত্রে নিবন্ধন বাধ্যতামূলক করা হলে বহু প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আওতায় চলে আসবে। এতে একদিকে নিবন্ধন বাড়বে, অন্যদিকে করজাল সম্প্রসারিত হবে।

পাঠকের মতামত

চকরিয়ার ওসিকে উখিয়ায় বদলি, নেটিজেনদের অসন্তোষ

বিডি২৪লাইভ স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার ‘তাৎক্ষণিক প্রত্যাহারের নির্দেশ’ দেওয়ায় কক্সবাজারের চকরিয়া থানার ওসি মঞ্জুর কাদের ভুঁইয়াকে বদলি ...

রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শনে জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার

বাংলাদেশে সফররত জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি কক্সবাজারের উখিয়ায় রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করেছেন। শুক্রবার ...